লেখক : আনোয়ার আলদীন
উৎস : দৈনিক ইত্তেফাক
প্রকাশ : ১১ জুলাই, ২০১৫
যাকাত বিতরণ নিয়ে ইসলামের যা বিধান
পবিত্র মাহে রমযানের শেষ দিকে প্রতি বছরই একই মর্ম ঘটনার শোক আর ক্ষোভ মানুষকে ঘিরে নিচ্ছে। যাকাত নিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরণ্ন হত দরিদ্র মানুষ। গতকাল প্রভাতে ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ ২৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনা পুরো জাতিকে বেদনা-বিক্ষোভে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। আলোচনার মূল বিষয়ই এখন এভাবে কি যাকাত প্রদান ইসলাম সম্মত। এই যাকাত প্রদান হলো ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। যাকাত হচ্ছে বিত্তবানদের ধন-সম্পদের সেই অপরিহার্য অংশ যা সম্পদ ও আত্মার পবিত্রতা বিধান, সম্পদের ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং সর্বোপরি আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত খাতে ব্যয় করা হয়। যাকাত হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার একটি অনুপম সমাধান। যাকাত দ্বীনের এমন রুকন যা অস্বীকার করা কুফরী। যাকাত হলো গরিবের হক। যা সম্পদশালীর কাছে আমানত। যাকাত প্রদানে একটি বিশেষত্ব এই যে, এটি গোপনে দেয়ার ব্যাপারে উত্সাহী করা হয়েছে।
মূলত যাকাত, দান, খয়রাত প্রকাশ্যেও করা যায় আবার গোপনেও করা যায়। প্রকাশ্যে দান ও যাকাত দেয়ার উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষকে দান খয়রাত ও যাকাত দেয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা তাহলে এটি শুধু বৈধ তাই নয়, বরং অতি উত্তম। আর যদি প্রকাশ্যে দান খয়রাত করলে অথবা যাকাত দিলে আমিত্ব, বড়ত্ব বা অহংকার চলে আসার সম্ভাবনা থাকে তবে গোপনে যাকাত ও দান খয়রাত করা ভাল। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ’যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান দক্ষিণা কর তবে তা অনেক উত্তম। আর যদি গোপনে দান কর এবং অভাবগ্রস্তদের মাঝে দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম।’ (সুরা বাকারা-২৭১)।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ব্যতীত যখন কোথাও কোন ছায়া থাকবে না, সাত প্রকারের লোক আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি এমন হবে, যে এমন গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে যে, তার বাম হাত জানতে পারে না যে ডান হাত কি খরচ করলো।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর আম্বর শাহ শাহী মসজিদের প্রধান খতিব হাফেজ মাওলানা কারী আতা উল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, ময়মনসিংহে যেভাবে যাকাত দেয়ার আয়োজন করা হয়েছে তা ইসলামে সম্পূর্ণ না-জায়েজ। যাকাতের নগদ টাকা গরিবের অধিকার। মাইকিং করে কমদামি শাড়ী-লুঙ্গি দেয়া নিষিদ্ধ। এভাবে যাকাত দেয়া যায় না। যাকাতের টাকা পাওয়ার অধিকারীদের হাতে পৌঁছে দেয়া উত্তম। আর তারা দরিদ্র আত্মীয় হলে তাদের যা প্রয়োজন তাই দেয়া। আর সব চেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো-যারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত তাদের বাড়িতে গিয়ে গোপনে তাদের হাতে তুলে দেয়া। তিনি বলেন, অনেকে বলেন, এতো যাকাত কিভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গোপনে পৌঁছে দিবো? আমি বলছি. ভোটের সময় হলে যদি ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে পারে যাকাত দেয়ার সময় কেন ঘরে ঘরে গিয়ে দিতে পারবে না? এখন যাকাতের নামে যা হচ্ছে তা লোক দেখানো। যা ইসলামে হারাম।
মাওলানা আতা উল্লাহ বলেন, অনেকে নিজেকে গরিব দুখির সাথী কিংবা দানশীল প্রমাণের জন্য যাকাতের নামে ঘোষণা দিয়ে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করে থাকেন। এগুলো ক্রয়ের জন্যও আবার ‘যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়’ মর্মে সাইনবোর্ডধারী দোকানের দারস্থ হয়। যাকাতের কাপড় মানেই কম দামের নিম্নমানের কাপড়। অল্প টাকায় বেশি সংখ্যক পাওয়া যায়, তা টেকসই হোক বা না হোক বেশি লোককে দেয়া যায় এটাই বড় কথা। এভাবে যাকাত গ্রহণকারীদের ভিড়ে বাড়ি থৈ থৈ করে, এমনকি মানুষের ভিড়ে পায়ের নিচে পড়ে অনেকে মারা যাচ্ছে। মানুষের ভিড়ে লোকজন বলবে ‘আহ! লোকটা কত ভালো, কত টাকা যে গরিবদের জন্য বিলায় ! মূলত এগুলোই হচ্ছে রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত। যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে সে মুশরিকদের পর্যায়ে পড়ে। তার আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।