উত্তর: আপনার পিতা জীবিত থাকাবস্থায় তার ঋণের কারণে আপনার যাকাতের হিসাবে তারতম্য হবে না। তবে আপনার পিতার মৃত্যুর পরে নিম্নবর্ণিত তিনটি অবস্থার মধ্যে যে অবস্থাটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেই অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আপনি যে বৎসরের যাকাতের হিসাব কষতে চান সেই বৎসরের মধ্যে আপনার সম্পদ থেকে যে পরিমাণ অর্থ / সম্পদ আপনার মৃত পিতার ঋণ পরিশোধে আপনি ব্যয় করেছেন বা করবেন মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই পরিমাণ সম্পদ বাদ দিয়ে কেবল অবশিষ্ট যাকাতযোগ্য সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ হারে যাকাত আপনাকে আদায় করতে হবে।
১ম অবস্থাঃ- কাফন-দাফনের খরচের পর ঋণগ্রস্থ মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট পরিত্যক্ত স্থাবর-অস্থাবর সাকূল্য সম্পদের মূল্য অপেক্ষা তার ঋণের পরিমাণ যদি বেশী হয় তাহলে মৃত ব্যক্তির উক্ত পরিত্যক্ত সম্পদ পাওনাদারদের মাঝে আনুপাতিক হারে বন্টণ করা হবে। অর্থাৎ, মৃত ব্যক্তির মোট ঋণের শতকরা যত ভাগ যে পাওনাদার প্রাপ্য হন, তাকে মৃত ব্যক্তির উক্ত পরিত্যক্ত সম্পদের শতকরা তত ভাগ প্রদান করা হবে।
২য় অবস্থাঃ- ঋণগ্রস্থ মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের খরচের পর তার কোন সম্পদ অবশিষ্ট না থাকলে পাওনাদারগণ কিছুই পাবেন না। তেমন অবস্থায় সম্পূর্ণ ঋণ বা ঋণের অপরিশোধিত অংশ পরকালে হিসাব হবে। এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারিগণকে ঋণগ্রস্থ মৃত ব্যক্তির ঋণ ইহকালে পরিশোধে বাধ্য করা যাবে না। তবে পরকালীন হিসাব থেকে মুক্তির জন্য কেউ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ঋণগ্রস্থ মৃত ব্যক্তির সম্পূর্ণ বা আংশিক ঋণ পরিশোধ করলে তা হবে ইহসান বা বদান্যতা। আবার কোন উত্তরাধিকারী যদি ঋণগ্রস্থ অবস্থায় মৃত তার পূর্বাধিকারির ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার করেন, তাহলে তা পালন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
৩য় অবস্থাঃ- কাফন-দাফনের খরচের পর ঋণগ্রস্থ মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট পরিত্যক্ত স্থাবর-অস্থাবর সাকূল্য সম্পদের মূল্য অপেক্ষা তার ঋণের পরিমাণ যদি কম হয় তাহলে মৃত ব্যক্তির উক্ত পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে প্রথমে সকল প্রকার ঋণ পরিশোধ করা হবে; অতঃপর অবশিষ্ট সম্পদের অনধিক এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা মৃত ব্যক্তির কৃত অছিয়ত পূরণ করা হবে এবং পরিশেষে অবশিষ্ট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ উত্তরাধিকারিদের মধ্যে ফরাইজ অনুসারে বন্টণ করা হবে।
—–করাচীর মুফতী ইহসান উল্লাহ শায়িক প্রণীত জদীদ মুআমেলাত কে শরয়ী আহকাম—-১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৮৪।